SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের কারণে মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস অর্থাৎ কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসগুলো নির্গমনের কারণে বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা শুরু হয়েছে তাতে বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে। অন্যান্য দেশ এ ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার আগেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে এর মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘ তার সতর্কীকরণে বলেছে পরবর্তী ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বাড়লে তাতে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি অংশ প্লাবিত হবে এবং প্রায় ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবে। আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর তথ্য অনুসারে ২০৩০ সালের পর নদীর প্রবাহ নাটকীয়ভাবে কমে যাবে। ফলে এশিয়ায় পানির স্বল্পতা দেখা দেবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে ঘন ঘন বন্যা, ঝড়, অনাবৃষ্টি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে অনুভূত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ADB) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ এশিয়ায় শস্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। জলবায়ুর অন্য আনুষঙ্গিক পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ১৫০ কোটির বেশি মানুষ সরাসরি পানি ও খাদ্য ঝুঁকিতে পড়বে। ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এ শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বে চাষাবাদ ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি (MIT) অর্থনীতিবিদদের নতুন গবেষণা অনুসারে বিশ্ব উষ্ণায়ন ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যকার ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দেবে।
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো— মরুকরণ, বন্যা, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর অনিশ্চয়তা। এগুলোর প্রতিটিতে শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকার ৫টি ভাগের একটিতে শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণসহ ৩টিতে নাম আছে বাংলাদেশের। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ (সারণি ২)।

সারণি ২ : বৈশ্বিক ঝুঁকিতে থাকা পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১২টি করে দেশের তালিকা

মরুকরণ       বন্যা        ঝড়    সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি           কৃষিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা
মালাউয়ি *বাংলাদেশ  ফিলিপাইন    সব নিচু দ্বীপদেশ   সুদান
ইথিওপিয়া  চীন *বাংলাদেশ     ভিয়েতনাম   সেনেগাল
জিম্বাবুয়ে ভারত  মাদাগাস্কার   মিসর   জিম্বাবুয়ে
ভারত কম্বোডিয়া  ভিয়েতনাম    তিউনিসিয়া   মালি
 মোজাম্বিক   মোজাম্বিক  মলডোভা    ইন্দোনেশিয়া   জাম্বিয়া
নাইজার ্লাওস  মঙ্গোলিয়া     মৌরতানিয়া    মরক্কো
মৌরতানিয়া ্পাকিস্তান  হাইতি     চীন   নাইজার
ইরিত্রিয়া  শ্রীলঙ্কা  সামোয়া    মেক্সিকো   ভারত
সুদান  থাইল্যান্ড  টোঙ্গা    মিয়ানমার   মালাউয়ি
শাদ ভিয়েতনাম  চীন     *বাংলাদেশ    আলজেরিয়া
কেনিয়া  বেনিন  হন্ডুরাস   সেনেগাল   ইথিওপিয়া
ইরান  রুয়ান্ডা  ফিজি     লিবিয়া     পাকিস্তান

উৎস : বিশ্বব্যাংক, ২০০৯

১৯৯২ সালে UNFCCC (United Nations Framework Convention on Climate Change) নামে জাতিসংঘের একটি অঙ্গ সংগঠন প্রতিবছর বিশ্বনেতাদের নিয়ে বিশ্ব জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিরসনে কাজ করা এর মূল লক্ষ্য। এই সম্মেলনকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘কপ' (COP Conference of the Parties).
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ২০০৯ সালে জাতিসংঘের বিশ্বজলবায়ু সম্মেলনে তিন পৃষ্ঠার অঙ্গীকারনামাকে একটি নোট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অঙ্গীকারনামায় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২° সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং ২০১০-২০১২ সালের জন্য তিন হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিলের কথা বলা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ বনায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা অর্জনের জন্য ব্যয় করা হবে। ফলে এই তহবিলের অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ যেমন- চীন, ভারত ও ব্রাজিল পাবে। জাতিসংঘ একে রাজনৈতিক সমঝোতা হিসেবে উল্লেখ করেছে।


কাজ : সারণি ২-তে বৈশ্বিক ঝুঁকিতে থাকা পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১২টি করে দেশের তালিকায় এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কতটুকু হুমকিতে রয়েছে, তা বিশ্লেষণ কর
(দলগতভাবে)।